নাগরিকত্ব ত্যাগকারীদের করের আওতায় আনছে এনবিআর: পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ

Homeআইন-আদালত

নাগরিকত্ব ত্যাগকারীদের করের আওতায় আনছে এনবিআর: পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ

বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন অর্থ পাচার রীতিমতো এক অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভয়াবহ সমস্যা রোধে জাতীয় রাজস্ব বো

সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের পরিবারের ২৩ ব্যাংক হিসাব জব্দ: দুদকের তদন্তে নতুন মোড়

বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন অর্থ পাচার রীতিমতো এক অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভয়াবহ সমস্যা রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রস্তাব করছে এক নতুন আইন, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। প্রস্তাবিত এই আইনের লক্ষ্য শুধু রাজস্ব আদায় নয়, বরং অর্থ পাচার রোধে সরকার যে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, তারই একটি স্পষ্ট বার্তা।
নাগরিকত্ব ত্যাগ করলেও করের আওতায়
নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেউ যদি বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেও দেশে সম্পদ বা আয়ের উৎস রেখে যান, তাহলে তাঁকে কর দিতে হবে। অর্থাৎ, বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও বাংলাদেশে থাকা আয় বা সম্পত্তির উপর কর দিতে হবে। এনবিআরের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে যেকোনো লেনদেন করলেই সেই তথ্যের ভিত্তিতে কর ফাঁকির অভিযোগ আনা এবং প্রয়োজনে সম্পদ জব্দ করার সুযোগ রাখা হচ্ছে।
পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ উদ্বেগজনক
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এমনকি একটি ব্যক্তিগত তদন্তে দেখা গেছে, একজন বাংলাদেশির নামে বিদেশে রয়েছে ৩৫০টি বাড়ি! বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি দেশ ত্যাগ করেছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ১৫ এপ্রিল ২০২৫-এর এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলেন,
“রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং কর ফাঁকি রোধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই নতুন উদ্যোগ সেই লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও আছে
তবে বাস্তবতার নিরিখে প্রশ্ন উঠেছে, এই আইন কতটা কার্যকর হবে? বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের সম্পদের তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হবে? আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ কার্যত অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া– এসব দেশে এমন আইন থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইনের স্বচ্ছতা, প্রয়োগযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা-ই মূল চ্যালেঞ্জ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২৮ মে ২০২৫-এ বলেন,
“সরকার পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে তৎপর, তবে এটি একটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া।”
অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কয়েকবার অর্থ পাচারকারীদের কর ছাড় দিয়ে অর্থ ফেরতের সুযোগ দেওয়া হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। সেজন্য নতুন আইন কার্যকর করতে হলে দরকার বিশ্বস্ত তথ্যভাণ্ডার, আন্তঃদেশীয় সমঝোতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কেবল আইনের খসড়া করলেই চলবে না—তা যেন বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।
একটি সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ
এই উদ্যোগ সফল হলে তা কেবল রাজস্ব বাড়াবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে। অর্থ পাচার রোধে আইনগত কাঠামো মজবুত করা এখন সময়ের দাবি। সরকারের উচিত বাস্তবভিত্তিক রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলা।

COMMENTS

WORDPRESS: 0
DISQUS: